সিলেটে জেলা প্রশাসক হটাও’ কর্মসূচিতে নেমেছেন সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী

- ডেস্ক রিপোর্ট:
- 02 Jul, 2025
সিলেটে রাস্তায় নেমেছেন সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা মো: আরিফুল হক চৌধুরী। জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি রাজপথে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
এদিকে স্থানীয় বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, জেলা প্রশাসকের সঙ্গে ‘কিছু বিষয় নিয়ে’ আরিফুল হক চৌধুরীর মনোমালিন্য ও দূরত্ব চলছে। এখন ইজারা বন্ধ থাকা সিলেটের পাথরকোয়ারি চালুর দাবিতে পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সাম্প্রতিক আন্দোলন এবং মেজরটিলা এলাকায় উচ্ছেদের শিকার ব্যবসায়ীদের ক্ষুব্ধতার সুযোগে আরিফুল হক ‘জেলা প্রশাসক হটাও’ কর্মসূচিতে নেমেছেন।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় নগরীর কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় এ অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। এ কর্মসূচিকে শ্রমিক, মালিক ও ব্যবসায়ীদের অধিকার আদায়ের কর্মসূচি বলে ঘোষণা দেন। কর্মসূচিতে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের পাশাপাশি পরিবহন শ্রমিকনেতারাও যোগ দেন। মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন আহমদ মাসুকের সঞ্চালনায় সমাবেশ শুরু হয় এবং বেলা ১টার দিকে সমাবেশ শেষ হয়।
সমাবেশে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ছাড়াও কেন্দ্রীয় বিএনপির ক্ষুদ্রঋণ–বিষয়ক সহসম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি সাদিকুর রহমান, জেলা সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাজী ময়নুল ইসলাম, জেলা সড়ক পরিবহন বাস মিনিবাস কোচ মালিক সমিতির সভাপতি হাজী আবদুর রহিম, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহসম্পাদক মো. আবদুস সালাম, জেলা শ্রমিক দলের সদস্যসচিব নুরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশ থেকে পরিবহনমালিক ও শ্রমিকনেতারা আগামী শুক্রবারের মধ্যে সিলেটের ডিসিকে অপসারণ না করলে শনিবার থেকে সিলেটের সব সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেন।
সমাবেশে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই জেলার বিভিন্ন স্থানে পাথর ভাঙার যন্ত্রের (ক্রাশার মেশিন) ব্যবসায়ীদের বৈধ বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে জেলা প্রশাসন। কোনো ধরনের সময় কিংবা নোটিশ না দিয়ে নগরের মেজরটিলা এলাকায় রাস্তার পাশে থাকা বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদও করা হয়েছে। ডিসি এই অঞ্চলের ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নষ্ট করছেন। তাই ভুক্তভোগী বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ডিসিকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, ডিসি পাথর সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে আজ এক সভা ডাকেন। তবে পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী কিংবা পরিবহন শ্রমিক নেতা, কেউ তাঁর বৈঠকে যাননি। নির্যাতন- নিষ্পেষণ করার পর ডিসি বলছেন, এখন এসো। তাই সবাই ঘৃণাভরে এ বৈঠক প্রত্যাখ্যান করেছেন। ৪ জুলাইয়ের মধ্যে ডিসিকে প্রত্যাহার না করলে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেন তিনি।
মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী জানিয়েছেন, আরিফুল হক চৌধুরীর জেলা প্রশাসক হটাও কর্মসূচির সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এটা একান্তই তাঁর নিজস্ব কর্মসূচি। তবে সিলেটে একটা অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে বলেও জানান তিনি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের পাথরকোয়ারিগুলো ইজারা দিয়ে এবং পাথর ভাঙার যন্ত্রের বিদ্যুৎ-সংযোগ আবার চালুর দাবিতে সম্প্রতি পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী-শ্রমিকেরা কর্মবিরতি, পরিবহন বন্ধ রাখাসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন। এমন পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে রাজনৈতিক নেতা, পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে দুপুর ১২টার দিকে বৈঠকে বসেন ডিসি।
সেই বৈঠকে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, জেলা জামায়াতের আমির হাবিবুর রহমান ও সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন, মহানগর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি মো. শাহজাহান আলীসহ ব্যবসায়ী ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ জানান, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতেই পাথর ভাঙার যন্ত্রের বিদ্যুৎ- সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। এ ছাড়া সিলেট-তামাবিল আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্থকরনের অংশ হিসেবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) তাদের জায়গায় গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে করেছে। সরকারি কর্মকর্তারা তাঁদের কাজের অংশ হিসেবেই এখানে দায়িত্ব পালন করছেন। এখন হঠাৎ করে আমার অপসারণ চেয়ে এমন কর্মসূচি পালন করার বিষয়টি একেবারেই দুঃখজনক বলেও মন্তব্য করেন জেলা প্রশাসক।
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *
সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
